আজ রবিবার, ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচনের অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে: সিইসি

নির্বাচনের অনুকূল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সারা দেশে নির্বাচনের সুবাতাস ও অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচনসংক্রান্ত এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সিইসি এ কথা বলেন।

নির্বাচনের দিন সফটওয়্যার–সংক্রান্ত ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএমএস), ক্যানডিডেট ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস) এবং রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরএমএস) নিয়ে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এতে নির্বাচনী কাজে থাকা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

মাঠ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কে এম নুরুল হুদা বলেন, মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনমুখী আচরণ লক্ষ করা গেছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রার্থীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। তাঁদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে তা প্রতিফলিত হচ্ছে। তাঁরা অনবরত সভা-মিছিল করে যাচ্ছেন। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন। সুতরাং দেশব্যাপী নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সিইসি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেটার নিয়ামক হিসেবে আপনারা যে যাঁর অবস্থান থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সক্ষমতার সঙ্গে, সার্থকতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। আমরা প্রশিক্ষণের এমন কোনো স্তর বাদ রাখিনি, যে কারণে মাঠপর্যায়ে গিয়ে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো ঘাটতি থাকে।’

নুরুল হুদা বলেন, ‘নতুন কতগুলো দিক নিয়ে এই বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ইভিএমের কথা বলা হয়েছে। অন্য সব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের যে এজেন্ট কেন্দ্রে থাকবেন, সেই পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি নতুন যোগ হয়েছে। আমরা তাঁদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেব। তাঁরা তাঁদের এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেবেন। নির্বাচন কার্যক্রমের নীতি, আচরণবিধি, নির্বাচন পরিচালনাবিধি, পোলিং বুথের ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক অবস্থা ইত্যাদির ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পোলিং এজেন্টদের ধারণা দেওয়া এর উদ্দেশ্য। এতে পোলিং এজেন্টরা তাঁদের দায়িত্ব বুঝতে পারবেন।’

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন। এতে পোলিং এজেন্টরা আইনগত দিকগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক থাকবে বলেও উল্লেখ করেন সিইসি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে ধীরে ধীরে আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই। ৩০ তারিখে সেটার শেষ দিন। সেদিন প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটাররা ভোট দেবেন। ভোট নির্বাচন কমিশনের  কাছে একটি আমানত। সেই আমানত, সেই ভোটের ফলাফলগুলো বিশ্লেষণ এবং বিতরণ করার জন্য আপনাদের হাতে চলে যাবে। সুতরাং, এই বছরব্যাপী পরিশ্রম এবং বছরব্যাপী প্রস্তুতির ফসল আপনাদের হাতে চলে যাবে।’

সিইসি আরও বলেন, ‘আপনাদের একটু ভুলের কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সঠিকভাবে ফলাফল বিতরণ ও বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত কঠিন। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সঠিকভাবে আপনাদের এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

নির্বাচনের মৌলিক ও বেশির ভাগ দায়দায়িত্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে ভাগ করে দিয়েছেন বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং তাঁদের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তাদের ওপর এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আমরা যদি কেন্দ্রভিত্তিক বিবেচনা করি, তাহলে কিন্তু নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্বটা চলে যাচ্ছে কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে। কারণ, কেন্দ্র থেকে আমরা নির্বাচনের ফলাফল পাব। সুতরাং কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁদের কাছ থেকে আপনারা ফলাফল নেবেন।’

সিইসি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ হয়ে রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে চলে গেছে। আর সেগুলো দেখভাল করার জন্য কতগুলো কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেগুলোর একটি হলো ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি। সারা দেশে ১২২টি ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সারা দেশে নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে, আচরণবিধি ভঙ্গ হলে অথবা নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো আইন বিচ্যুতি কর্মকাণ্ড ঘটলে সেগুলো সংশোধন করবেন। তাঁরা অনুসন্ধান করবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।

সিইসি বলেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বিচারিক হাকিম) থাকবেন চার দিন। তাঁরা মূলত প্রার্থী ও সমর্থকদের কোনটা আচরণবিধি ভঙ্গের কারণ, তা বুঝতে সাহায্য করবেন। সেগুলো শুধরে দেবেন। না শোধরালে বিচার করার সুযোগ থাকবে। তাঁদের হাতে অপরাধ আমলে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।

মাঠপর্যায়ে অভিযোগ জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমাদের যেটা অসুবিধা হয়, সেটি হলো অভিযোগগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে কেন্দ্র থেকে চলে আসে। এই অভিযোগগুলো আমাদের কাছে না এসে তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছে গেলে সমাধান পাবেন।’ অভিযোগ এভাবে পাঠানোর জন্য সবার কাছে অনুরোধ জানান তিনি।